২১তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। ২০ থেকে ২১ ডিসেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বড় ধরনের রদবদল হবে। এছাড়া পরিবর্তন আসবে প্রেসিডিয়ামেও। সম্পাদকমণ্ডলীতেও দেখা যাবে নতুন মুখ। সব মিলিয়ে বড় ধরনের রদবদল ঘটতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
এ সম্মেলন ও আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তারুণ্যনির্ভর করার কৌশল নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানা গেছে। তবে, দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে কি না সে বিষয়টি এখন পরিষ্কার নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে তার ঘনিষ্টজনদের সঙ্গে কোনো আলাপ আলোচনা করেননি।
যদিও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে জোড়ালোভাবে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বর্তমান কমিটির অর্ধেকের বেশি নেতার পদ-পদবিতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
বাদপড়ার তালিকাও দীর্ঘ হবে। অর্ধেকের মতো নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছিটতে পড়তে পারেন এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবারের ২১তম জাতীয় সম্মেলন ও ২২তম জাতীয় সম্মেলন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ বছরের নেতৃত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে দল সাজাবেন। নেত্রী (শেখ হাসিনা) তার ঘনিষ্টদের কাছে এমন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলেছেন। এসবের দুই-একটি আলোচনায় সেই নেতা নিজেও ছিলেন বলেও মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, এবারের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ২১ ও ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিকে প্রবীণ থেকে নবীনের সংখ্যা বৃদ্ধির কৌশল নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রায় সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে ৩০ নভেম্বর। ধারণা করা হচ্ছে সহযোগী সংগঠনের মতো ওইদিনই নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে। আগের সম্মেলনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে অনেকটাই বোঝা যাচ্ছে বিতর্কিতরা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছে না।
কারণ এরই মধ্যে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো থেকে বাদ পড়েছেন বিতর্কিত নেতারা। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ এবং কৃষক লীগেও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নেতৃত্ব আনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও বিতর্কিত কাউকে না রাখার পক্ষে হাইকমান্ড।
গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যারা নিজেকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের অনেককে বাদ দেওয়া হবে, আবার কাউকে কাউকে বাদ না দিলেও কম গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের আমলনামা বিশ্লেষণ চলছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এ পার্টিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ অপরিহার্য নয়। কারণ শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নয়, পুরো দেশের মানুষের কাছে আজ আস্থার প্রতীক, ভরসার প্রতীক। শেখ হাসিনা নিজের নেতৃত্বকে দল বা দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিয়ে গেছেন।বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ কাতারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি এখন আওয়ামী লীগের অমূল্য অলঙ্কার। আমাদের অহংকারের জায়গা। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে নিয়ে গর্ব করে, অহংকার করে। এজন্য শুধু নেতাকর্মীদের আবদার ও দলের কথা বিবেচনা করে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
দলের ২১তম সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি আবারও দলের সভাপতি হিসেবে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করবে তা নিশ্চিত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
তবে কাউন্সিল সামনে রেখে এ পদে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে। যদিও এ নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না বা শেখ হাসিনাও এখনও কারও সঙ্গে তেমন কিছু মতবিনিময় বা আলোচনা করেননি।
যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পর দলের প্রেসিডিয়াম ফোরামে ব্যাপক রদবদল হতে পারে। এ ফোরাম থেকে বড় একটা অংশ বাদ পড়তে পারে। যুগ্ম সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে থেকে কারও কারও স্থান এ ফোরামে হবে। এছাড়া সম্পাদকণ্ডলীতেও বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। অনেকেই ছিটকে পড়তে পারেন। আবার কারও কারও পদোন্নতিও ঘটতে পারে।
পাঠকের মতামত